নামসর্বস্ব পত্রিকা ও অনলাইন পোর্টালের স্থানীয় সংবাদদাতা পরিচয়ে ভয়ভীতির মাধ্যমে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে রাজধানীর ডেমরা এলাকায় গণধোলাইয়ের শিকার হয়েছেন দুই ব্যক্তি। গতকাল সোমবার বিকেলে ডেমরার কোনাপাড়ার এলাকার ইস্টার্ন হাউজিং সোসাইটিতে এ ঘটনা ঘটে।
গণধোলাইয়ের শিকার কথিত সাংবাদিক পরিচয়দানকারীরা হচ্ছেন শরীফুল ইসলাম ও মাকসুদুল আলম রবি। উত্তেজিত জনতার তোপের মুখে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে নিজেদের আত্মরক্ষা করেছেন আরও কয়েজন সাংবাদিক পরিচয়দানকারী অজ্ঞাত ব্যক্তি ও ক্যামেরাম্যান।
ইস্টার্ন হাউজিং সোসাইটি সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তি ও হাউজিং এলাকায় বসবাসকারী অনেকের দাবি, নামসর্বস্ব পত্রিকার সাংবাদিক পরিচয়ে ইস্টার্ন হাউজিং এলাকায় একদল যুবক-তরুণ প্রায়ই অনুপ্রবেশ করে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও নির্মাণাধীন একাধিক ভবন মালিকের কাছে চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দিলে রাজউকের লোক ডেকে এনে ভবন ভেঙে দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ভিডিও ধারণ করে ভাইরাল করার হুমকি দেয়।
গতকাল সোমবার বিকেলে সাংবাদিক পরিচয়দানকারী ১০-১২ জন ভিডিও ক্যামেরা, স্টিল ক্যামেরাসহ ইস্টার্ন হাউজিং প্রবেশের চেষ্টা করলে হাউজিংয়ের প্রধান ফটকের দায়িত্বরত পাহারাদার তাদের পরিচয় জানতে চান। তারা নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে দ্রতগতিতে হাউজিং এলাকায় ঢুকে বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন ভবন, নির্মাণাধীন ভবন, ব্যবসায়ীদের দোকানপাট এবং নারী-শিশুসহ হাউজিংয়ে বসবাসকারী পথচারীদের ভিডিও ধারণ করতে শুরু করেন। খবর পেয়ে ইস্টার্ন হাউজিং সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলামসহ সোসাইটির কয়েকজন সদস্য তাদের কাছে গিয়ে পরিচয় নিশ্চিত হওয়া চেষ্টা করেন।
এ সময় নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দিলেও কে কোন পত্রিকার সাংবাদিক, তা জানাতে অপরাগতা প্রকাশ করেন তারা। একইসঙ্গে একটি ভবন থেকে নারী-শিশুসহ বের হওয়া কয়েকজনের ভিডিও ধারণ করতে গেলে সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক অনুমতি ছাড়া নারী-শিশুদের ছবি ধারণ করতে নিষেধ করেন। বাধা না শোনায় শরিফুল নামের এক ক্যামেরাম্যানের ক্যামেরা হাত দিয়ে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন সোসাইটির সম্পাদক। এ সময় শরিফুল ও তার কয়েকজন সঙ্গী নিজেদের সাংবাদিক পরিচয়ের পাশাপাশি স্থানীয় এক প্রভাবশালীর পরিচয় দিয়ে ইস্টার্ন হাউজিং সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক জাহিদকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। জাহিদকে কথিত সাংবাদিকদের কাছে উদ্ধারের জন্য সোসাইটির অন্য সদস্যসহ স্থানীয়রা এগিয়ে আসলে সাংবাদিক পরিচয়দানকারীরা তাদেরও ভিডিও ধারণের চেষ্টা করেন।
সোসাইটিতে বসবাসকারী ভুক্তভোগীরা উত্তেজিত হয়ে কথিত সাংবাদিক পরিচয়দানকারী দুইজনেকে মারধর দেওয়া শুরু করলে বাকিরা পালিয়ে যান। এই ঘটনায় সোসাইটির পক্ষ থেমে মামলা দায়ের করতে চাইলে পুলিশ অভিযোগ গ্রহণ করে তদন্তের প্রতিশ্রুতি দেন। অন্যদিকে গণধোলাইয়ের শিকার দুই ব্যক্তির পক্ষের অভিযোগ আমলে নিয়ে মামলা দায়ের করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়,কথিত সাংবাদিক ও চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের প্রধান আশিক। এই কথিত চাঁদাবাজ সাংবাদিক সিন্ডিকেটের আশ্রয় প্রশ্রয় দানকারী হলেন আফতাব হোসেন সফল । তিনি ৬৬ নং ওয়ার্ড আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি পদপ্রার্থী।
জানতে চাইলে ডেমরা থানার ওসি (তদন্ত) মো. ফারুক মোল্লা বলেন, চাঁদাবাজির বিষয়ে সোসাইটি থেকে লিখিত কোনো অভিযোগ করা হয়নি। মৌখিকভাবে অভিযোগ পেয়েছি, কিছু অর্থ পেলে হয়তো ভবন নির্মাণের অনিয়ম নিয়ে প্রতিবেদন করতেন না তারা।