শনিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৪২ পূর্বাহ্ন

বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন অনুষ্ঠিত।

  • প্রকাশের সময় : শুক্রবার, ১ মার্চ, ২০২৪
  • ৮৮ বার পঠিত

সাব্বির আহমেদ (মনির)

লক্ষাধিক আশেকে রাসুলের উপস্থিতিতে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা ও ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশের মধ্য দিয়ে ময়মনসিংহের ত্রিশালে অবস্থিত বাবে বরকত দেওয়ানবাগ শরীফে অনুষ্ঠিত হলো বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন।

একবিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ দার্শনিক ও সমাজ সংস্কারক, মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবন দানকারী, বীর মুক্তিযোদ্ধা হযরত সৈয়দ মাহবুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহঃ হুজুরের ৭৪তম শুভ জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে শুক্রবার (২৩শে ফেব্রুয়ারি) এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্ব প্রদানকারী মহামানব ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মাঃ আঃ হুজুরের আহ্বানে বাংলাদেশের ৬৪ জেলার পাশাপাশি সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, কাতার, কুয়েত, লেবানন, ওমান, মালদ্বীপ, ভারত, সুইডেন, জাপান, সাইপ্রাস, ডেনমার্ক, ইতালি, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, সাউথ আফ্রিকা, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, আয়ারল্যান্ড, হাঙ্গেরি সহ পৃথিবীর অনেকগুলো দেশ থেকে আশেকে রাসুল প্রতিনিধিগণ এই সম্মেলনে যোগদান করেন।

জুমার নামাজ শেষে উপস্থিত আশেকে রাসুলদের উদ্দেশে বাণী মোবারক প্রদান করেন প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা হুজুর। সমাজে শান্তি ফিরিয়ে আনতে এবং আল্লাহ ও রাসুল (সা.)-এর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে পরকালীন মুক্তি লাভের জন্য তিনি সবাইকে সৎ-চরিত্রবান হওয়ার নির্দেশ দেন।

ড. কুদরত এ খোদা হুজুর বলেন, “জগতের মানুষ যাতে সৎ-চরিত্রবান হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ও হযরত রাসুল (সা.)-এর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে, আমার মোর্শেদ হযরত সৈয়দ মাহবুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) পুরোটা জীবন সেই চেষ্টা করে গেছেন। এই কাজ করতে গিয়ে তিনি সারাজীবন অসহনীয় অত্যাচার, নির্যাতন, মিথ্যাচার ও নিন্দাচার হাসিমুখে সহ্য করেছেন। আল্লাহর মহান বন্ধু শাহ্ দেওয়ানবাগীর কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় আমি বর্তমানে আল্লাহ ও রাসুল (সা.)-এর নির্দেশনার আলোকে মানুষকে হেদায়াতের রাস্তায় পরিচালিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

আলোচনা শেষে বিশ্ববাসীর শান্তি, মুক্তি ও ক্ষমা কামনায় আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন জামানার ইমাম ড. কুদরত এ খোদা হুজুর। এসময় উপস্থিত আশেকে রাসুলগণ প্রভুর দরবারে কান্নায় ভেঙে পড়লে পুরো সম্মেলন চত্বরে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

সম্মেলনে ইসলামি গবেষক, ওলামায়ে কেরাম, শিক্ষাবিদ ও সুধীগণ তাদের বক্তব্যে সৈয়দ মাহবুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী হুজুরের গৌরবান্বিত জীবনী তুলে ধরেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মাহবুব এ খোদা দেওয়ানবাগী হুজুর ১৯৪৯ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জে এক প্রখ্যাত সুফি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পূর্বপুরুষগণ ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে মদীনা থেকে বাংলায় আগমন করেছিলেন।

 

দেওয়ানবাগী হুজুর মাদ্রাসা ছাত্র সংগঠনের ভিপি থাকা অবস্থাতেই উনসত্তরের গণুভ্যুত্থানে জড়িয়ে পড়েন এবং সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া পশ্চিমাঞ্চলের সভাপতি হিসেবে গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেন। ১৯৭১ সালের ১১ই এপ্রিল ৭২ জন সঙ্গী নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন এবং ৩ নম্বর সেক্টরের প্লাটুন কমান্ডার হিসেবে সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ পরিচালনা করেন।

সেক্টর হেডকোয়ার্টারে অনুষ্ঠিত ইদুল ফিতরের নামাজে দেওয়া খুতবায় ঈদুল আজহার আগেই দেশ স্বাধীন হওয়া এবং মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে রেসকোর্স ময়দানে ইদুল আজহার নামাজ আদায়ের স্পষ্ট ভবিষ্যতবাণী করেন দেওয়ানবাগী হুজুর। এই ভবিষ্যদ্বাণী সত্য হয় এবং সৈয়দ মাহবুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী হুজুরের ইমামতিতেই রেসকোর্স ময়দানে সকল সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধাগণ ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেছিলেন।

পরবর্তিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৬ বেঙ্গল রেজিমেন্টের রিলিজিয়াস টিচারের চাকরি ছেড়ে দিয়ে তৎকালীন জামানার ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ চন্দ্রপুরী (রহ.)-এর দরবারে দীর্ঘ এক যুগ কঠোর আধ্যাত্মিক সাধনায় নিমগ্ন হন। ইমাম শাহ চন্দ্রপুরী কর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে তিনি সুফিবাদের প্রচারে আত্মনিয়োগ করেন এবং ১৯৮৫ সালে নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানাধীন দেওয়ানবাগ গ্রামে প্রথম দরবার শরীফ প্রতিষ্ঠা করেন।

এখান থেকেই দেওয়ানবাগী হুজুর হিসেবে তিনি পরিচিতি লাভ করেন। ইসলাম ধর্ম হযরত মুহাম্মদ (সা.) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় তিনি তার প্রচারিত তরিকার নামকরণ করেন ‘মোহাম্মদী ইসলাম’। পরবর্তীতে তিনি বাংলাদেশে ১১টি দরবার সহ বাংলাদেশ ও বিশ্বের শতাধিক দেশে ৫ শতাধিক খানকা ও জাকের মজলিস প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে সারাবিশ্বে তার অনুসারির সংখ্যা ৩ কোটির বেশি।

৮ খণ্ডে সুবিশাল তাফসির রচনার পাশাপাশি তিনি তাসাউফের ওপর বেশ কয়েকটি অমূল্য গ্রন্থ রচনা করেছেন। ইসলাম ধর্মে তার শতাধিক সংস্কার রয়েছে যেগুলোর মধ্যে ২৮টি সংস্কার বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) রাষ্ট্রীয়ভাবে উদযাপন, শুক্রবারে সাপ্তাহিক ছুটি প্রদান, মাতৃভাষা বাংলায় খুৎবার প্রচলন, শরিয়াসম্মত পদ্ধতিতে জমির রেজিস্ট্রেশন প্রচলন, পাঠ্যপুস্তকে তাসাউফ অন্তর্ভুক্তকরন, আশুরার দিনটি আল্লাহর অভিষেকের দিন হওয়ায় এইদিনে সরকারি ছুটি প্রদান উল্লেখযোগ্য।

২০২০ সালের ২৮ ডিসেম্বর আল্লাহর এই অলীর বিপুল কর্মময় জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে। ওফাতের আগে তিনি তার মেজো ছেলে ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা হুজুরের কাছে সকল দায়িত্ব হস্তান্তর করেন যিনি নিজেও একজন উচ্চ স্তরের সুফি সাধক। বর্তমানে ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা হুজুরের নেতৃত্বে মোহাম্মদী ইসলামের কার্যক্রম সারাবিশ্বে পরিচালিত হচ্ছে।

Facebook Comments Box
এই জাতীয় আরও খবর