শনিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:২৫ পূর্বাহ্ন

জনপ্রিয়তায় পিছিয়ে মোস্তাফিজুর , শক্ত অবস্থানে আব্দুল্লাহ কবির লিটন

  • প্রকাশের সময় : শুক্রবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৩
  • ১৩০ বার পঠিত

কে এ সেলিমঃ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে  নৌকা প্রতিক নিয়ে  বর্তমান এমপি  মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী এবং ট্রাক প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী  হিসাবে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল্লাহ কবির লিটন । জনপ্রিয়তায় পিছিয়ে রয়েছেন মোস্তাফিজুর আর শক্ত অবস্থানে রয়েছেন আব্দুল্লাহ কবির লিটন । তিনি তার

মেধা , মনন , প্রজ্ঞা , দূরদর্শিতা ও কারিশমা দিয়ে তার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি করায় হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছেন । বাশখালি উপজেলার যেখানেই তিনি উঠান বৈঠক,পথসভা কিংবা গণসংযোগ করছেন সেখানেই জনতার ঢল নামছে । এবারের মতো এমন জনস্রোত এর আগে কোন নির্বাচনে পরিলক্ষিত হয়নি । তার পক্ষে দল,মত, শ্রেণী,পেশা নির্বিশেষে জনতার এমন স্বতঃস্ফুর্ত সমর্থন দেখে অনেকেই তাকে হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার সঙ্গে তুলনা করছেন। হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার বাঁশির সুরে মন্ত্রমুগ্ধের মতো সবাই যেভাবে তার পিছু পিছু ছুটতো ঠিক সেইভাবে মন্ত্রমুগ্ধের মত স্বপ্ন জাগানিয়া আবেগঘন ভাষন শুনে উপস্থিত সবাই বিমোহিত হয়ে তার প্রতি সমর্থন ব্যাক্ত করছেন । আর অন্য দিকে বিতর্কীত বিভিন্ন

 

কর্মকান্ডে সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী দলের নেতাদের কাছেই  সমালোচিত । স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতারা  বলছেন, তার জন্য কয়েকবার আমাদের দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে  তিনি সব জায়গায় ‘ক্ষমতার দাপট’ দেখিয়ে চলাফেরা করেন এভাবে রাজনীতি হয় না । স্থানিয় স্কুল শিক্ষক যোবায়ের শাওন বলেন, মুক্তিযোদ্ধার ওপর হামলা ,উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে মারধর, চাচাকে চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতানো, নামে-বেনামে বিভিন্ন প্রকল্পের নামে টিআর-কাবিখার টাকা লুট, জামায়াতপ্রীতি, দলীয় নেতাকর্মীদের মামলায় জড়ানো ও অনুসারী দিয়ে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করানোসহ নানা পাগলামিতে অতিষ্ঠ হয়ে ফুসে উঠেছে সাধারণ জনগণ । এবার ভোটের মাধ্যমে তিনি এগুলোর জবাব পাবেন । এই সাক্ষাৎকারের  জন্য আমার উপর হামলা হতে পারে এরপরও আমি ভয় পায় না কারন এখন সময় এসেছে অন্যায়ের জবাব দেওয়ার তাই আপনাদের মাধ্যমে দিলাম ।

প্রবীণ রাজনীতিবিদ অধ্যক্ষ সফদর আলী বলেন , এই এলাকার সাবেক সাংসদ মরহুম সুলতানুল কবির চৌধুরীর জীবদ্দশায় বাঁশখালী আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দুটি গ্রুপ সক্রিয় ছিল; এরমধ্যে একটি ‘সুলতান গ্রুপ’ অপরটি ‘লিটন গ্রুপ’ হিসেবে পরিচিত। বাঁশখালীতে আওয়ামী লীগের এই দুটি গ্রুপ নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে কৌতূহলের শেষ ছিল না। তবে সুলতানুল কবির চৌধুরীর মৃত্যুর পর গ্রুপিং ও প্রতিযোগিতার রাজনীতিতে ভাটা পড়ে; সৃষ্টি হয় আরও কয়েকটি গ্রুপ। সুলতানুল কবির চৌধুরীর আমৃত্যু প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু’র ভাগিনা আবদুল্লাহ কবির লিটন। বর্তমানে তাঁর অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী । এবারের নির্বাচনের মেরুকরন খুব কঠিন ! বাশখালি আসনের সাধারন  জনগণ বলছেন, ব্যতিক্রমধর্মী এক রাজনীতিবিদ আবদুল্লাহ কবির লিটন। যার রয়েছে আওয়ামীলীগের অগনীত কর্মী। এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাঁশখালী আসনে তার বিকল্প নেই । দলিয় মনোনয়ন না পেয়েও কিভাবে  এতো কর্মী এত জন্স্রোত ? স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কি তিনি জিততে পারবেন ।

এ বিষয়ে আবদুল্লাহ কবির লিটন বলেন, সর্বস্তরের জনগণ আমার পাশে আছে ‘আমার কর্মীরাই  আমার বন্ধু। আমার প্রতি তাঁদের অগাধ ভালোবাসা আছে বিধায় আমি নির্বাচনে অংশগ্রহন করেছি । যারা বাঁশখালীর মাটি কী রকম একবার হেটেও দেখেনি তারা কীভাবে এখানকার জনপ্রতিনিধি হবে? ভাড়া প্লেয়ার নিয়ে গোল দেওয়া যায় না। যারা সিজনে সিজনে দল পাল্টায় সে সব প্লেয়ার দিয়ে গোল দেওয়া যায় না। তিনি আরো বলেন, আমার ত্রিশ বছরের স্বপ্ন বাঁশখালীকে মডেল বাঁশখালীতে রুপান্তর করা। আপনারা আমাকে একবার সুযোগ দিন আমি আপনাদের নিরাশ করব না।

রাজপথ কাঁপানো তুখোড় রাজনীতিবিদ আবদুল্লাহ কবির লিটনের শিক্ষাজীবন শুরু হয় ১৯৬৮ সালে চট্টগ্রামের বাওয়া স্কুলে। পরবর্তীতে ১৯৭৪ সালে ভর্তি হন চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে। সেখান থেকে চলে আসেন সেন্ট প্ল্যাসিডস্ স্কুল অ্যান্ড কলেজে। ১৯৭৮ সালে এই প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি মেট্রিকুলেশন পাস করেন। এরপর ভর্তি হন চট্টগ্রাম কলেজে। ১৯৮০ সালে স্বনামধন্য এই বিদ্যাপীঠ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরবর্তীতে ১৯৮১ সালে ভর্তি হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। সারাদেশে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন শুরু হলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি সেশনজটের কবলে পড়েন। ১৯৮৫ সালে তিনি স্নাতক পাস করেন। কর্মজীবনে আবদুল্লাহ কবির লিটন একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। তিনি আবদুল ওয়াহাব স্টিল মিল ও হোসেন থাই এলুমিনিয়াম অ্যান্ড গ্লাস হাউজের মালিক ।

পুকুরিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ বরুমছড়া গ্রামের বনেদি পরিবার মিয়ার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করা আবদুল্লাহ কবির লিটন ১৯৭৯ সালে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। এরপর ১৯৯৬ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত তিনি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন। আবদুল্লাহ কবির লিটনের বাবা এবিএম নুরুল কবির তাঁকে সবসময় উৎসাহ-অনুপ্রেরণা দিতেন । চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানের হাত ধরে তার রাজনীতিতে আসা। এক প্রশ্নের জবাবে আবদুল্লাহ কবির লিটন বলেন আমার মামার পিছনে (আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু) বিভিন্ন মিটিং-মিছিলে অংশগ্রহণ করেছি। আমার মামা আমাকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের জয়েন্ট সেক্রেটারি বানাতে চেয়েছিলেন। আমার মামা যেখানে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট, সেখানে আমি জয়েন্ট সেক্রেটারির দায়িত্ব নিতে যাবো কেন? ওনার পেছনে থেকে, ওনার রাজনীতি করা-ই যথেষ্ট মনে করেছি। তাই এই পদ নেইনি। আমার মামাতো ভাই  ভূমিমন্ত্রী। কোনোদিন আমার মামাতো ভাইয়ের সম্মান ক্ষুন্ন হয়; এমন কাজ করিনি। শেখ হাসিনার আদর্শ আর বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে লালন করে পথ চলি  । এবারের নির্বাচনে জনগণ যদি আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে তবে তাদের আমানতের খেয়ানত হতে দেব না এবং বাশখালিকে সারা বাংলাদেশের মধ্যে মডেল এলাকা হিসেবে গড়ে তুলবো ।

 

Facebook Comments Box
এই জাতীয় আরও খবর