গাজায় ইসরাইলি বর্বরতার শুরু থেকেই পাশে আছে যুক্তরাষ্ট্র। শুধু মৌখিকভাবে নয়, অস্ত্র-গোলাবারুদ দিয়েও সহায়তা করে যাচ্ছে পরম মিত্রকে। আরব বিশ্ব থেকে শুরু করে গোটা বিশ্বের সামনেই যেমন নিয়মিতভাবে গাজার বেসামরিক মানুষের ওপর ইসরাইলি হামলা বন্ধের নীতি কথা শুনাচ্ছে, তেমনি গাজা ধ্বংসে তেল আবিবে নিত্য নতুন বোমা-বারুদের চালানও পাঠাচ্ছে নিয়মিতই। উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন বিধ্বংসী আধুনিক সেসব যুদ্ধাস্ত্রে ছারখার হচ্ছে গাজা। যুক্তরাষ্ট্রের পাঠানো এসব অস্ত্রেই হামাস ধ্বংসের অজুহাতে প্রতিদিন শত শত নারী-শিশুদের হত্যা করছে ইসরাইল।
শুক্রবার নতুন করে হত্যাযজ্ঞ শুরুর আগেই ১৫ হাজার ছাড়িয়েছিল গাজার বেসামরিক নাগরিকদের মৃত্যু! এরপরও ইসরাইলে ভয়ংকর সব বোমা-বারুদের চালান পাঠচ্ছে ইসরাইল। এত লাশ, এত রক্ত, এত হাহাকারেও যেন রক্তের পিপাসা মিটছে না যুক্তরাষ্ট্রের। শনিবার মার্কিন দৈনিক ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরাইলে আবারও শক্তিশালী ‘বাঙ্কার ব্লাস্টার’ বোমা পাঠিয়েছে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসন। যুদ্ধবিরোধী বিশ্ববিবেকের মুখে এখন একটাই ঘৃণা- ইসরাইল নয়, ইসরাইলের হাত দিয়ে গাজাবাসীকে মারছে যুক্তরাষ্ট্রই!
৭ অক্টোবর থেকে ইসরাইলে এ পর্যন্ত ১০০ বিধ্বংসী ‘বাঙ্কার ব্লাস্টার’ পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। শক্তিশালী এ বোমাটি কংক্রিটের দুর্ভেদ্য কাঠামোও ভেদ করতে পারে নিমিষেই। ‘ব্লু-১০৯’ নামে নতুন পাঠানো ব্লাস্টার বোমাগুলো ২,০০০ পাউন্ড (৯০০ কেজি)।
‘সি-১৭’ নামক কার্গো বিমানে এ বোমার চালান পাঠানো হয়েছে। একই বিমানে অন্যান্য ধরনের ১৫ হাজার বোমা এবং ৫৭ হাজার আর্টিলারি সেলও ছিল। অন্য বোমাগুলোর মধ্যে রয়েছে ৫ হাজার এমকে ৮২ আনগাইডেড বোমা, ৫ হাজার ৪০০টিরও বেশি এমকে ৮৪ বোমা, প্রায় ১ হাজার জিবিইউ-৩৯ ছোট ব্যাসের বোমা এবং প্রায় ৩,০০০ জিডিএএমএস প্রভৃতি।
মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাতে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গত মাসে জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে চালানো বড় হামলাটিও ‘বাঙ্কার ব্লাস্টার’ দিয়েই চালানো হয়েছিল। প্রায় ১ টন ওজনের সেই বোমা দিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল শিবিরটিতে। ৫০ জন শরণার্থীর মৃত্যুসহ প্রায় ৪০০ জন আহত হয়েছিল হোয়াইট হাউজের পাঠানো ওই বোমায়! এবার প্রথম নয়, এর আগেও বিধ্বংসী বাঙ্কার ব্লাস্টার ব্যবহার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তা সত্ত্বেও বিশেষ এ বোমার এবার গাজায় ব্যবহার নিয়ে চিন্তিত বিশেষজ্ঞরা।
কেননা, আয়তন-পরিসীমা হিসাবে এ বোমার ব্যবহার সব জায়গায় প্রযোজ্য নয়। এ বিষয়ে আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র এর আগে সিরিয়া, আফগানিস্তান এবং ইরাকের যুদ্ধে এ ধরনের বোমা ব্যবহার করেছে। তবে সেগুলো উন্মুক্ত স্থান ছিল। অপরদিকে গাজা অবরুদ্ধ এবং ঘনবসতিপূর্ণ। গাজা সম্পূর্ণ একটি ভিন্ন পরিবেশ। এমনকি কংগ্রেসেও অনেকে গাজায় বাঙ্কার বোমা হামলা চালানোর বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। কিন্তু কারও কথায়ই কানে তুলছেন না দেশটির ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক দলের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ( ৮১)। দোসর রাষ্ট্রটিকে শুধু অস্ত্র-গোলবারুদ দিয়েই হাত গুটিয়ে বসে নেই বাইডেন সরকার।
রীতিমতো পিতৃছায়া দিয়ে রেখেছে ইসরাইলকে। গাজার বর্বরতার প্রতিশোধ নিতে ইরান যেন হামলা চালিয়ে না বসে, সে লক্ষ্যে যুদ্ধ শুরুর পরদিনই ভূমধ্যসাগরে ৫ হাজার সেনা এবং এফ-৩৫ যুদ্ধ বিমানসহ বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী রণতরি ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ড পাঠায় পেন্টাগন (মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ)। ১৫ অক্টোবর পাঠায় আরও আরেকটি ইউএসএস ডোয়াইট ডি আইজেনহাওয়ার। আর জিম্মি উদ্ধারে সহযোগিতার ডেল্টা ফোর্সের বিশেষ দলটি পাঠায় রণতরি পাঠানোরও আগে।